ভাণ পত্রিকা
৩৬ তম ই-সংস্করণ ।। ৪৬ তম সংখ্যা ।।মার্চ ২০২৪
সম্পাদক :
সম্পাদনা সহযোগী :
প্রচ্ছদ :
নক্সা পরিকল্পক :
অন্যান্য কাজে :
ভাণ-এর পক্ষে:
পার্থ হালদার
কর্তৃক
৮৬, সুবোধ গার্ডেন, বাঁশদ্রোণী, কলকাতা : ৭০০০৭০ থেকে প্রকাশিত। যোগাযোগ : ৯৬৪৭৪৭৯২৫৬
( হোয়াটসঅ্যাপ ) ৮৩৩৫০৩১৯৩৪ ( কথা / হোয়াটসঅ্যাপ )
৮৭৭৭৪২৪৯২৮ ( কথা ) bhaan.kolkata@gmail.com ( ই – মেল )
Reg. No : S/2L/28241
সম্পাদকের কথা
।। সম্পাদকের কথা।।
।।মার্চ ২০২৪।।
গাছে গাছে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় বসন্ত লাগিল। এদিক লাগিল ভোট। জোড়া উৎসবে রঙের আতিশয্যে চোখে ঝাপসা লাগিয়া যাবার জোগাড়! ভোট-বসন্তে পলাশও মিলিবে লাশও মিলিবে। মূলে থাকা তৃণ, পদ্ম প্রেমে আকুল হইবে। এই কাল দ্বিপ্রহর পর্যন্ত যাহাকে নিয়ম করিয়া গাল পাড়িয়াছি আজি বসন্তের অমোঘ লীলায় তাহারই গালে আবির আঁকিয়া দিব। কখনো সবুজ কখনো গেরুয়া তাহার রঙ। বক্ষপিঞ্জরে ক্ষমতালোভী যশলোভী অর্থলোলুপ পাখিটি কাকে যে কখন দেহ-মন সমর্পণ করিয়া বসিবে তাহার হিসাব রাখে সাধ্য কাহার!? ব্যভিচার, প্রেমে শুদ্ধ হইয়া যায়— একথা কে না জানে! সহজিয়ারা বলিবেন যেখানে প্রেমে এমন ঘন স্বর পড়িয়াছে তাহা ব্যাভিচার হইবে কেমন করিয়া? তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে সুখ।
সেই হার এখন টিকিট এ রূপান্তরিত হইয়াছে। এই ঘোর বসন্তে মন কোথায় পুরুলিয়া-ঘাটশিলা করিবে তাহা নহে, হৃদয় এখন টিকিট টিকিট করিতেছে। মনে পড়ে শিশুকালে পিতৃদেব বাসে ভ্রমণ সারিয়া ফিরিলেই টিকিটের দাবিদার ছিলাম আমি। রেলের মোটা গাট্টাগোট্টা টিকিটের ছিল আলাদা আভিজাত্য। এখন দলের টিকিটের জন্য হাহাকার পড়িয়াছে দেখিতেছি। দেশের যা পরিস্থিতি একবার টিকিট লাগাইয়া পাইরলামেন্টে টিকি টি বাঁধিতে পারিলে এড়ে বাছুরকে বকনাতে পর্যন্ত রূপান্তরিত করা অসম্ভব নহে। এরে কয় পলিটিক্যাল পাওয়ার। তুমি যতই ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি পাশ দাও, ক্যালানে হইয়াই থাকিতে হইবে যদি না তুমি পলিটিক্যাল পাওয়ার-এর লম্বা হাতের কিয়দংশ মস্তকে ছুয়াইতে পার!
সব ক্ষমতা রুলিং পার্টির রকমারি রুলে। গণতন্ত্রের সমস্ত স্তম্ভ-টম্ভ সে ক্ষমতার নিকট হতভম্ব হইয়া পড়ে। আমি সেই ক্ষমতার আকাঙ্খী। পার্টি সিঁড়ি মাত্র। লক্ষ্য মসনদ। আদর্শ বুলি মাত্র। লক্ষ্য একচ্ছত্র দাপট। যে দাপটে জোকারও তুড়ি বাজাইয়া বৌ ছাড়ে, বৌ ধরে। যার দাপটে জাজ ও জোকার বনিয়া যান। এ এক এমন পাওয়ার, ওয়ান আওয়ারে খেলা ঘুরিয়া যায়। উহার তরে সায়ন্তিকা কাঁদে, হুমায়ূন ফোঁসে, সুনীল ফোপায়। পার্টি কর্মীরা নিজেদের পার্টির অফিস ভাঙিয়া দেয়। কে না জানে ক্ষমতার উৎস ভোট। জনতার মন-ভোট এর দরকার নাই। যেনতেন প্রকারেন জ্বাল-জুয়াচুরি, ভয়-অর্থ যোগে ভয়ার্থ পদ্ধতি হইলেও চলিবে। যে দাদার যত ভোট তাহার তত দাপট। যাহার যত দাপট তাহার তত ভোট। শুটিং ছাড়িয়া নায়িকা মাটি ঘাঁটিয়া তিন বৎসরাধিক কাল মাঝে মধ্যি গরিবের ঘামের গন্ধ সহ্য করিয়াছেন। এমন ঘটিয়া-কাম কেন করিলেন যদি এমন বসন্তে টিকিট অপ্রাপ্তির খবর আসে!! ব্যারাকপুর ভাবিলেন তোমার জন্য মাগ ছাড়িয়া আসিলাম। এখন তুমি অন্য নাগরে মন দিলে চলে কী প্রকারে??
ইহারই মধ্যে এ একে ছাড়িয়া তাকে, সে দ্রৌপদীকে হাতে রাখিয়াই সুভদ্রার সনে ঘর ফাঁদিল। কোন টিভির দিদি, রাজনীতর দিদির ডাকে সাড় দিয়া ছবির-দিদি আর মাটির-দিদিকে একাকার করিলেন। দিদি মাটি, মাটি দিদি। দিদি-মা আর মা-দিদি। কত সহজ। আমি জি তে যেমন হাসিতাম, এইবার সিঙুরে হাসিব। সিরিয়াস রাজনীতি চুলোয় যাইতেছে। সিঙ্গুরেই কেবল সিঁদুরে মেঘ নহে, আশঙ্কা সর্বত্র। বসন্তে এসব চলে বটে, কিন্তু নিত্য সময় বাতাসে তারে টিভিতে কিংবা ছবিতে— উহাদের ডিটেইল জানিবার এবং জানাইবার বাসনা এমন উদগ্র হইয়া উঠা মধুর নহে। নিজেতে মজিবার ক্ষমতা হারাইয়া সর্বদা অপরের বেডরুমে উঁকি ঝুঁকি, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হিতকারী নহে। দেশের দশের আশু কাজে আমাদের যতটুকু দায় তাহা হইতে এ এক পালাইবার কায়দা। মধ্যবিত্ত দৃশ্যত উহাতেই মজিয়া আছে। নোংরামি চাখিবে, না চাটিয়া পারিবে না, তাহার পর ওয়াক থুঃ বলিয়া হাস্যকরভাবে জাত বাঁচাইতে চাহিবে!!
সকলে ছবি দেখিতে চাহে, দেখাইতে চাহে, ছবি হইতে চাহে। ছবির জন্য মিটিং ফ্যাসান-র্যাম্পে বদলাইয়া গেল। কী বলিলাম, কেন বলিলাম, কতটা যুক্তিযুক্ত হইল ইহা আর বিবেচ্য নহে। কেমন করিয়া বলিলাম। কেমন ম্যাজিক করিয়া, জোকারি করিয়া, চ্যাঁচাইয়া, ভ্যাঙাইয়া, ছড়া কাটিয়া, ভুল কবিতা বলিয়া, ডাহা মিথ্যা বলিয়া, নাচিয়া কুদিয়া এলাকাকে বুঁদ করিয়া দিলাম ইহাই এখন আসল কথা।
সর্বদা নারদ-নারদে মজিয়া আছি। কে হোঁচট খাইল, কে ঠেলিল, মাথাই মাথাকে ঠেলিল নাকি অন্য কোনও কালো হাত? আদৌ ঠেলিল নাকি নাকি রটাইল এবং রটিল? কেন বসন্ত আসিলেই ঠ্যালা মারে ভূতে? বসন্ত ভূতের প্রিয় কেন? ভূতের এই অদ্ভূতেড়ে বসন্ত প্রেমের কারণ ক? গবেষণা যেন থামিতেই চাহে না। কে কাহার সহিত মদ গিলে, কোথায় বৌ প্রাক্তন বরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হইলেন— ইত্যাদি টক-ঝাল-মিষ্টি লেবু লঞ্জেন্স কী কেলো রাজনীতির নামে চলিতে থাকে। এ কাজে ভদ্রলোক বামপন্থীদের উল্লেখযোগ্য অবদান দেখি। মানুষ কেন উহাদের ভোট দিতেছে না, তাহার কারণ অনুসন্ধান ছাড়িয়া উহারা অন্যের ছিদ্রান্বেষণে সর্বদা বিভোর হইয়া আছেন। যাহাদের নিকট রাজনীতি ব্যাপার খানা সবচাইতে সিরিয়াস ব্যাপার হওয়া উচিত ছিল, সেই ভদ্রলোক মিমাগ্রহী বামপন্থীদের অন্য পক্ষকে তাচ্ছিল্য করিয়াই দিন কাটিতেছে দেখিতে পাই। বিজেপি তৃণমূল হইবে, তৃণমূল মাঝেমধ্যে বিজেপি বনিবে। এমনকি কংগ্রেসে রূপান্তরিত হইবে। ইহাতে জনতার তেমন বিস্ময় নাই। কিন্তু মধ্যবিত্ত বামপন্থীদের সতীত্বে ইহা সতত আঘাত করিতেছে। ইহা তো মহা জ্বালা হইল, দক্ষিণপন্থার ভিতরকার ক্ষমতার প্রকরণে যে আসা-যাওয়া তাহাতে বামপন্থীদের কী আসিয়া যায়!? বরং ইত্যাবসরে বছরে দুই-একজন হইলেও বামপন্থী নেতার দক্ষিণায়নে গমনকে সরজমিনে তদন্ত করিয়া দেখা দরকার। উহারা কত খারাপ দক্ষিনপন্থী এটা কম প্রমান করিয়া, নিজেরা কত বেশি বামপন্থী— সেই দায় লইলেই বোধকরি দল বাঁচিবে, ভোট বাড়িবে, দেশও বাঁচিতে পারে।
রাজনীতির সত্যিকারের ময়দান ছাড়িয়া অপরাজনীতিকে রাজনীতি বলিয়া দাগাইতে চাওয়া দক্ষিণপন্থার কাজ। সেই টোপে মাছ হইয়া জবাব চলে না, গরিব লড়াকু জনতার মাঝ হইতে হুঙ্কার ছাড়িতে হয়। তাহাতে শুধু লেনিন হাকিলে চলে না, দেশটাকে চিনিতে হয়। লাল কতটা বাসন্তী হইল, ইহার চাইতে গরিবের কতটা মুক্তিতে লাগিলাম ইহাই বড় হইয়া দেখা দিক। শ্রেণি চেতনানকে বক্ষে ধারন করিয়া এই কঠিন ও নিষ্ঠুর ও ভয়াল সময়ের হাল ধরিতে ঝগড়া চালাইবার যুক্তি যথেষ্ট নহে। গরিব নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের মন-বন্ধু হইয়া ওঠার শক্তি। সেই শক্তি, সেই বিশ্বাস আমাদের নিজেদের কেও রক্ষা করিবে বৈকি!!
যাপিত নাট্য ' এর ঊনবিংশ কিস্তি লিখলেন - কুন্তল মুখোপাধ্যায়
কুন্তল মুখোপাধ্যায়
২০২০ সাল গোধরা কান্ড নিয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ধর্মকে ভিত্তি করে সারা দেশে এক ধরনের বিভাজনের রাজনীতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এই সময়ে আমরা সংলাপ কলকাতা, সর্বপ্রথম নাটক নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাই ‘হায় রাম’ নাটকে মধ্য দিয়ে। একজন সুস্থ সচেতন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে নাটক নিয়ে এই পরিবেশের ইতিবাচক বিরোধিতা করার কথাই আমার মাথায় এসেছিল। এক বিবেকবান অধ্যাপক তার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন, গান্ধীকে আশ্রয় করে। মাঝেমাঝে গান্ধীকে দেখতেও পান তিনি, গান্ধী তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন। অধ্যাপক অলোকপ্রসাদের এই আচরণ তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে অন্যের মনে প্রশ্ন তোলে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আসা শাসক দলের নেতা টিমনভাইকে তিনি বলে ওঠেন যে তাঁদের পন্থা, তাঁদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তিনি সমর্থন করেন না। ইতিমধ্যে রাণু, অলোকপ্রসাদের মেয়ে এক ভিন্নধর্মী নাট্য অভিনেতাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন, উত্তেজনা ও সঙ্কট আরও গভীর চাপ ফেলে এই পরিবারে। সঙ্কটের মধ্যেই ভয়কে অতিক্রম করে অলোকপ্রসাদ, তাঁর স্ত্রী মালা, ভাই অংশু, রাণু সেই বিপন্ন যুবককে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়, যদিও এই পরিবারের ওপর সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। গরবসে কহো হম হিন্দু হ্যায়-এর বিপ্রতীপে এক নিঃশব্দ প্রতিবাদে পরিণতি পায় নাট্য-কাহিনি। ‘হায় রাম’-এর ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল সেই সময়ে সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায়। মিডিয়া ডকুমেন্টেশন গান্ধীজীর রচনা, চারপাশের মানুষজনদের প্রতিক্রিয়া, আপাত প্রগতিবাদীদের আচরণ— এ-ও এক ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে পিছিয়ে থাকা। আমার সংবেদনশীল মনে যে প্রশ্ন তুলেছিল তারই ফলশ্রুতি ‘হায় রাম’। নাটকে পাবলো নেরুদা, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকারের কবিতা ব্যবহার করেছিলাম। জার্মানিতে তৃতীয় রাইখের সময়ে প্যাস্টের মার্টিন নাইমেলার বিখ্যাত উক্তি ব্যবহার করেছিলাম। সংলাপের অভিনেতাদের ভালো টিম ওয়ার্ক ও উচ্চমানের অভিনয় এই নাটককে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। তাপস সেনের আলো, সঞ্চয়ন ঘোষের মঞ্চ, মুরারি রায়চৌধুরীর সংগীত, তপন চক্রবর্তীর রূপসজ্জা এই প্রযোজনার সাফল্যের বড় কারণ। এই নাটকে প্রথম আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন নন্দিতা রায়চৌধুরী (সেই থেকেই আমার নিজের দিদি), আর ছিলেন বিতানদা, পরিতোষদা, অপুদা, শ্রুতিনাথ, শঙ্কর, রণো, হরপ্রসাদ, সুব্রত, মানিক, প্রণবদা, চুম্পা (পরে তিতাস), আর গুরুপদ। গুরুপদ ‘কালচক্রে’ও অভিনয় করেছিল, তবে গুরুপদ ‘হায় রাম’-এ ভাবলেশহীন মুখে হিন্দুত্ববাদীদের শ্লোগান উচ্চারণ করেও এক নতুন মাত্রা এনেছিল। বিতানদা, পরিতোষদা, অপুদা, শ্রুতি, চুম্পা ও নন্দিতাদি এমনভাবে নিজেদের ভেঙেছিলেন, যা সত্যিই শিক্ষণীয়। শঙ্কর, হর আর রণ খুবই ভালো অভিনয় করেছিল। ‘হায় রাম’-ও আমরা প্রায় শতাধিক অভিনয় করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের হেন জায়গা ছিল না, যেখানে আমরা হায় রামের অভিনয় করিনি। এই প্রযোজনা পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার পুরস্কার পেয়েছিল। মনে পড়ে, কলেজ থেকে বেরিয়ে আমি, বিতানদা, শ্রুতি বালি ঘাট স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, হর আর শঙ্কর, গুরুপদ এসে দাঁড়াল পাশে, আর সবাই বাসে। বাস এসে দাঁড়িয়ে পড়তেই রণো আর পরিতোষদার তত্ত্বাবধানে সবাই উঠে পড়লাম বাসে। ‘হায় রাম’-এর এত শো দেখে বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দিতাদিকে দেখলেই কপালে হাত দিয়ে বলে উঠত, ‘হায় রাম’। আমরা এই নাটকেও সমালেচকদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। টিভিতেও আলোচনায় সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ‘হায় রাম’-এর প্রভৃত প্রশংসা করেন। শ্যামল চক্রবর্তী, সুদর্শন রায়চৌধুরী, মহম্মদ সেলিমের মতো রাজনৈতিক নেতারা যেমন ভালো বলেছিলেন, তেমনই নাটকের অরুণদা, বিভাসদা, অশোকদা, অসিতদা, চন্দনদা, দ্বিজেনদা, বন্ধু সংগ্রাম, গৌতম (বহরমপুর), ডলি, সীমা, বিমল, প্রকাশ এবং থিয়েটারের প্রচুর মানুষ ‘হায় রাম’কে ভালোবেসেছিলেন। শিশির সেন, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃপেন সাহা, বিষু বসু, বাবলু দাশগুপ্ত, শিব শর্মা হায় রামের প্রশংসা ও প্রচার করেছিলেন। হায় রামের যে বিষয়টা আমার এখনও মনে পড়ে তা হল মানুষের এই নাটকটাকে ভালোবাসা, এক জায়গায় শো-এর পরেই অন্য জায়গায় কল শো-এর বুকিং ঠিক হয়েষ যাওয়া। এই নাটকে আমার বড় পাওনা তাপস সেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ, মেক-আপ ও সংগীতের ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন। উনি এই নাটকে কাজ করতে করতে বলেছিলেন, মনে হচ্ছে ষাটের দশকে উৎপলের সঙ্গে কাজ করছি, আবার আমাকে বকুনিও দিয়েছিলেন। শিশির মঞ্চে স্টেজ রিহার্সালের সময় টাইমস অব ইন্ডিয়ার সুদীপ আমার একটা ইন্টারভিউ সমেত নাটকটির প্রিভিউ করতে এসেছিলেন, তাপসকাকু আমায় বললেন, কুন্তল একসঙ্গে দুটো কাজ হয় না, আগে নাটকটা ঠিকমতো নামুক, তারপর ইন্টারভিউ। সব মিলিয়ে ‘হায় রাম’ আমার আর সংলাপের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
প্রথমেই একটা ত্রুটি স্বীকার করি, ‘হায় রাম’ ২০০২ সালের প্রযোজনা। এই নাটকটি যখন পড়া হয়, তখন আমাদের দুই-এক বন্ধু এই প্রযোজনাটি আদৌ মঞ্চস্থ করা যাবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, বিশেষ করে নাটক চলাকালীন কোনও শক্তি নাটকটি বন্ধ করে দেবে কি না এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে নাটকের রিহার্সাল শুরু হতেই আমাদের প্রত্যয় হচ্ছিল যে এই নাটক যে ভাবেই হোক মঞ্চস্থ করতেই হবে। লিখিত ফার্স্ট ড্রাফ্ট-এর সঙ্গে রোজকার পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন ইনফরমেশন, ডকুমেন্টেশন যুক্ত করা হত, কিন্তু খেয়াল রাখতাম যেন নিছক প্রেপাগান্ডা না হয়ে যায়, নাটকীয়তা যেন বজায় থাকে। মঞ্চসজ্জায় সঞ্চয়নের সঙ্গে কথা বলে সাইক্লোরামার সামনে লোহার ফ্রেমের উপরে প্রায় ১০ ফুট ফাইবার গ্লাসের, ডান্ডি অভিযানে অংশগ্রহণরত একটা গান্ধী মূর্তি রাখা হত, গোটা ঘরটা ওয়াল হিসেবে ওই ডান্ডি অভিযানের অংশগ্রহণকারীদের ছবির কোলাজ করে, অন্তত ৬টি ছবি দিয়ে সমগ্র মঞ্চটা সাজানো হত, এর মধ্যে দিয়েই এন্ট্রি, এক্সিট, শুধু টিমন ভাইয়ের অফিসটা ডাউন স্টেজ লেফটে দু’টো ব্লক দিয়ে আলাদা করা হত। ফলে দর্শকদের সবসময় এমন একটা পরিবেশের মধ্যে রাখা হত যেখানে ‘হিংসার ধর্মের আর ধর্মের হিংসার’ পারস্পরিক অবস্থানের ভিতর দিয়ে দ্বন্দ্বটা পরিস্কার হয়ে ওঠে। ‘হায় রাম’-এর যেহেতু অনেক অভিনয় হয়েছে, সেহেতু দলের অনেক অভিনেতাই পরবর্তীতে অভিনয়ে অংশ নিয়েছে, এদের মধ্যে অমিতাভের কথা আগে বলতে হবে। শ্রুতি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অমিতাভকে অংশুর ভূমিকায় নামতে হয়েছে, তাছাড়া টুবলু আর তিতাস অনেক শো করেছে। এমনকি ঝুলনও বর্ধমান ও কলকাতায় অনেক শো করেছে। ‘হায় রাম’-এর বেশ কিছু নাট্য মুহূর্ত দর্শকের মনে আলোড়ন তুলত। নরেন্দ্র আর অমৃত যেখানে কেশবের পোশাক উন্মোচন করে তার ধর্ম পরীক্ষা করতে চাইত, আর এর প্রতিবাদ করায় যখন অংশু, নাসিমের সঙ্গে নরেন্দ্রদের সংঘাত লাগে তখন মালা (নন্দিতাদি) এসে বলেন ‘না আর হিংসা নয়, আমার বাড়ির মাটিতে আমি আর হানাহানি করতে দেব না] বা তার পরের মুহূর্তেই আলোক প্রসাদ যখন চোখের সামনে গান্ধী হত্যা দেখতে পান ও মালা আর রানু তাকে ধরে ফেলে বা মি. আপতে যখন এসে বলেন যে তাঁর কুকুরের গলার নলি কেটে দিয়ে গেছে, অনেক দর্শক আমাকে তাঁদের সেই সময়ের রিঅ্যাকশন জানিয়েছেন। তবে নাটকের শেষ দৃশ্যে টিমন ভাইরা যখন আলোক প্রসাদদের ভয় দেখিয়ে চলে যায়, আলোক প্রসাদ তাদের শাস্তি দাবি করেন, মালা তাঁকে ভেতরে নিয়ে যান, সেই সময় ফাঁকা মঞ্চে প্রায় দু’মিনিট ধরে ফোন বেজে যাওয়ার মধ্যে পর্দা নেমে আসত, এক অমোঘ নৈঃশব্দ আর টেনশন নিয়ে। এতে অনেকেরই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। প্রপস জোগাড়ের জন্য দক্ষিণাপন মলে গিয়ে গুজরাট হ্যান্ডলুমের দোকান থেকে শাড়ি, কুর্তা এবং বসার দড়ির চেয়ারের মতো ব্লক তৈরি করেছিলাম, আপতের একটা ঘষা কাচের চশমা বউবাজারের চশমার দোকান থেকে খুঁজে এনেছিলাম। একটা বিশেষ দৃশ্যে দাভের (হর) হাত থেকে অ্যাটাচি খুলে পরে যাওয়ার প্রত্যেক শোয়ের, টাইমিং ছিল দেখার মতো। গণশক্তির পত্রিকার বাৎসরিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, বিভিন্ন সংগঠন যারা ধর্মীয় হিংসার বিরুদ্ধে তারা অনেক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, খুব ভালো রিভিউ হয়েছিল, তবু ভাই বন্ধু গৌতম রায়ের কথা বলব, ওর বইতে ‘হায় রাম’-এর প্রচুর উল্লেখ করেছেন, আর প্রয়াত দিলীপ ভট্টাচার্য দেশ-বিদেশের প্রচুর পত্র-পত্রিকায় ‘হায় রাম’ নিয়ে লিখেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের এক ছাত্রী তার এম.ফিল dissertation-এ ‘হায় রাম’-কে নিয়ে কাজ করেছিল। নাট্য অ্যাকাডেমির পুরস্কার পাবার পর অ্যাকাডেমির টি-স্টলের সামনে কেক কাটার স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে। তবে রাজপুরের শোয়ের পর একজন বয়স্ক মানুষ আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, এই সাহসটা বুকের মাঝে জ্বালিয়ে রেখো, যাতে তোমাদের দেখে আমরা বাঁচতে শিখি।
(চলবে )
কলকাতার গালগপ্পো'র পঞ্চম পর্ব লিখলেন - কিশলয় জানা
কিশলয় জানা
আজ যে বৃহত্তর কলকাতা আমাদের সামনে দিন দিন ক্রমশ বেড়ে উঠছে, তিলোত্তমা হয়ে উঠেছে যথার্থ অর্থেই (একই সঙ্গে প্রদীপের নিচে অন্ধকার রয়েই গেছে), চিরদিন কিন্তু তেমন ছিল না মোটেই। বরং কলকাতা ছিল খানা-খন্দে ভরা, পচা ডোবা-জলা, অস্বাস্থ্যকর একখানি জনপদ। খুব বেশি মানুষের বাসও ছিল না এখানে। শ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গুলে জায়গায় ছিল মশা-মাছি ও আরো নানা ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপদ্রব। এমন একটি স্থান ইংরেজরা আসার আগে যে খুব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে পরিগণিত হত, তা মনে হয় না। মঙ্গলকাব্যগুলির যেখানে যেখানে কলকাতার উল্লেখ ও মহিমাকীর্তন আছে, কোন সন্দেহই নেই, সেগুলি পরবর্তীকালের সংযোজন, লিপিকরের দুষ্টুমি কিংবা কলকাতার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা।
এখন কলকাতার সীমা-চৌহদ্দী যতই বেড়ে উঠুক না কেন, পুরানো কলকাতার কথা যখন উঠেছে, তখন পাঠকদের কেউ কেউ জানতে আগ্রহী হতে পারেন যে, কতটা এলাকা জুড়ে ছিল সেই আদি কলকাতার ব্যাপ্তি? বলা বাহুল্য, নানা সার্ভেয়ার নানা সময়ে কলকাতার নানা ম্যাপ এঁকেছেন। মোগলদের কাছ থেকে বাৎসরিক ১১৯৪ টাকা ১৪ আনা ১১ পাই খাজনার বিনিময়ে তিনটি গ্রামের সত্ত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রথম যে অঞ্চলটি চিহ্নিত করেন তাঁদের এলাকা হিসেবে, তার সীমা ছিল পশ্চিমে ভাগীরথী থেকে পূবে ধাপা (তথা লবণ হ্রদ), উত্তরে সূতানুটি থেকে দক্ষিণে গোবিন্দপুর। এর আয়তন ছিল ৫০৭৭ বিঘা। এই সময় উক্ত অঞ্চলে বহু তাঁতির বাস ছিল, সম্ভবত তুলা উৎপাদনই ছিল প্রধান জীবিকা। শেঠ-বসাকেরা মূলত তুলার রপ্তানি করতেন, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও তাঁদের ব্যবসা সম্পর্ক ছিল। অবশ্য ইংরেজরা আসার আগে এখানে ছিল পর্তুগীজ এবং আর্মেনিয়ানদের ঘাঁটি।
পর্তুগীজরা ইউরোপ থেকে বাংলায় বাণিজ্য করতে আসে সবার আগে। পর্তুগীজ বণিক অ্যাফোনসো দি মেলো ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় পা রাখেন এবং ১৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা দেশে স্বাধীনভাবে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পদসঞ্চার’ উপন্যাস যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের কাছে এই তথ্য নতুন নয়। বস্তুত, ওই উপন্যাসটি পড়লে বাংলায় পর্তুগীজ অধিকার বিস্তারের কাহিনি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। তাঁদের বাণিজ্যের এলাকা ছিল পোর্টো গ্র্যাণ্ডি থেকে পোর্টো পেকেনো অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে সপ্তগ্রাম। ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই অবশ্য তাদের সৌভাগ্যসূর্য অস্ত যায়। কলকাতার মুচিখোলা তথা বর্তমান গার্ডেনরিচ অঞ্চলে তারা বসবাস করত। বাংলা থেকে রেশম, মসলিন, লাক্ষা, চিনি, চাল আর সুতো নিয়ে তারা রপ্তানি করত। আর ছিল ক্রীতদাসদাসীর ব্যবসা। কত যে লোক সেদিন তাদের হাত ধরে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে চালান হয়ে গেছে তার হিসেব মেলা দুষ্কর। এই সহবাসের কারণে, বাংলায় পর্তুগীজ শব্দের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়, আচার্য সুনীতিকুমারের মতে ১০০ থেকে ১১০টি পর্তুগীজ শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হতে হতে বাঙালি বনে গেছে। ইংরেজদের পুরানো দুর্গ তৈরি হয়েছিল পর্তুগীজদের একটি চার্চের কাছেই। এই চার্চটিই ছিল সম্ভবত কলকাতার আদি চার্চ, যদিও আর্মানিরা দাবি করেন, তাঁদের চার্চটিই কলকাতার সবচেয়ে পুরানো চার্চ। সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করে ইংরেজদের গির্জাটি ভেঙে দিলে কিছুকালের জন্য তাঁরা পর্তুগীজদের চার্চটিই দখল করেন, তবে ১৭৬০-এর দিকে নিজেদের চার্চ তৈরি হয়ে গেলে পর্তুগীজদের চার্চের অধিকার তাঁরা তাদের ফিরিয়ে দেন। পর্তুগীজরা অবশ্য ততদিনে নিজেদের নতুন চার্চ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছেন এবং সেই সূত্রেই নব্বই হাজার টাকা খরচ করে তাঁরা ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি করেন পর্তুগীজ চার্চ অব আওয়ার লেডি অব দ্য রোসারি তথা রোমান ক্যাথিড্রাল নামে পরিচিত। এই চার্চটি তৈরি করেন স্থপতি টমাস সিয়ারস ড্রাইভার, যিনি চার্চের নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান, এই চার্চ নির্মাণে সবচেয়ে বেশি অর্থ সাহায্য করেন বিখ্যাত পর্তুগীজ দুই ভাই— জোসেফ বারেটো এবং লুই বারেটো। জোসেফ বারেটো কেবল চার্চ তৈরির ক্ষেত্রেই সাহায্য করেন নি, পর্তুগীজদের নিজস্ব সমাধিক্ষেত্র গড়ে তোলার জন্য আজকের বৈঠকখানায় আট হাজার টাকা দিয়ে জমিও ক্রয় করে দেন। তাঁর নামেই বারেটো লেনের নামকরণ। একালের সকলে অবশ্য বো ব্যারাকস্ নামে অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান পল্লী হিসেবে স্থানটি এক ডাকে চেনেন।
পাঠকদের মধ্যে যাঁরা স্বল্পকাল হলেও বাংলা মিডিয়ামে পড়েছেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘সহজ পাঠ’ দ্বিতীয় ভাগ যাঁদের চাক্ষুষ দেখা ও পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, তাঁরা সেখানে আর্মানি গির্জার ঘড়িতে দশটা বাজার কথা পড়েছেন নিশ্চয়ই। এই আর্মানি গির্জা কোন কোন মতে, কলকাতার সবচেয়ে পুরাতন গির্জা। ইংরেজরা আসার বহু আগে থেকেই আর্মেনিয়ানরা এখানে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল এবং সূতা ও নটীর ব্যবসা করত। এই সূত্রেই রতন সরকার নামক জনৈকের নাম পাওয়া যায়, যিনি ছিলেন প্রথম যুগে কোম্পানির দোভাষী, তাঁর ব্যবসা ছিল নটীর। সূতা ও নটী থেকেই না কী সূতানটি তথা সূতানুটি নামটি এসেছে। ভুলে গেলে চলবে না, ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিলাতে যে সব চিঠিপত্র পাঠানো হয়েছিল কোম্পানির তরফে, সেখানে ‘কলকাতা’ নামের লেশমাত্র নেই, স্থানটির নাম সূতানুটি বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর পর থেকেই ফোর্ট উইলিয়ম এবং কলকাতা নামটি উল্লেখ করা হতে থাকে। সম্ভবত ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল থেকেই ‘কলকাতা’ হয়ে ওঠে ইজারা নেওয়া তিনটি গ্রামের মধ্যমণি।
অবশ্য, কেউ কেউ মনে করেন, ইংরেজরা আসার আগে হাতে গোনা কয়েকজন আর্মানি এখানে বাস করলেও তাঁদের মূল বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল চুঁচুড়া। জোব চার্ণকের সময় থেকেই তাঁদের কলকাতায় আসা। এই সূত্রে ১৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আর্মানিদের যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে স্পষ্টই বলা হয়, কেবল সামান্য করের বিনিময়ে বাণিজ্যের অধিকারই নয়, ‘Armenians shall not only enjoy the free use and exercise of their religion, but there shall also be allotted to them a parcel of ground to erect a church thereon for worship and service of God in their own way.’ এই চুক্তির ভাষা থেকে কিন্তু অনুমিত হয় যে ১৭০০ পর্যন্ত খাস কলকাতায় আর্মেনিয়ানদের কোন চার্চ ছিল না। কোম্পানি তাঁদের সঙ্গে যে চুক্তি করেন, তার শর্ত অনুসারে ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা একটি ছোট কাঠের চার্চ তৈরি করে আর্মানিদের হাতে তুলে দেন। এমনকি যাজকদের মাইনে হিসেবে বছরে পঞ্চাশ পাউণ্ড বরাদ্দ করেন। কেউ কেউ মনে করেছেন, ১৭০৭-এর আগে কলকাতায় আর্মানিদের সংখ্যা চল্লিশেরও কম ছিল। তবে প্রথম দিকে সদ্ভাব থাকলেও পরে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবসায়িক রেষারেষি চরমে পৌঁছায়। কলকাতায় আগত সকল বিদেশীদের উপরেই ইংরেজ যে দাদাগিরি করবে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। এই কারণে, কলকাতায় আর্মানিদের সংখ্যা খুব বেশি বাড়তে পারেনি কোনকালেই। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে জেমস্ লঙের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় আর্মানিদের সংখ্যা ছিল মোট ৮৯২— তার মধ্যে পুরুষ ৪৯৯ জন এবং নারী ৩৯৩ জন। যদিও এই সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য এবং কলকাতাবাসীর জীবনে তাঁদের প্রভাবও নগন্য, তবুও আর্মানিরাও যে কলকাতার আদি বাসিন্দাদের মধ্যে পড়েন, তাতে সন্দেহ নেই। উল্লেখযোগ্য যে, আঠারো শতকের প্রথম দিকেই ম্যানুয়েল হাজারমালিয়াঁ ভাগীরথীর তীরে যে ঘাটটি নির্মাণ করে দেন, সেটিই আজকের আর্মেনিয়ান ঘাট।
সত্ত্ব পেয়েই সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য কোম্পানি কালেক্টর নিয়োগ করেন। কলকাতার প্রথম কালেক্টর ছিলেন র্যালফ্ স্পেণ্ডার। মূলত ভূমিরাজস্ব আদায় করাই ছিল কালেক্টরের কাজ। গড়ে বিঘা প্রতি তিন টাকা কর দিতে হত। কিছুকাল পরে দেশীয় কালেক্টর নিয়োগ করা হয়, সম্ভবত দেশীয় মানুষদের কাছ থেকে সাহেব কালেক্টরের খাজনা আদায়ে অসুবিধে হচ্ছিল, সেই কারণেই। প্রথম দিকের আয়তন অবশ্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পলাশির যুদ্ধের পরে অনেকটাই বেড়ে যায়। ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দের একটি আদমশুমারি থেকে জানা যায়, এই সময় কলকাতার সীমায় বাস করতেন মাত্র দশ থেকে বারো হাজার লোক। এর মধ্যে অনেকখানি জল মিশ্রিত থাকতে পারে, কারণ, তখন আদমশুমারি আজকের মতো বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে করা হত না। আর ইংরেজদের দেওয়া তথ্যের অনেকখানিই যে প্রয়োজনমতো বাড়ানো-কমানো হত, তা বোঝা যায় যখন ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত (কিংবা কুখ্যাত) হলওয়েলের করা আদমশুমারি থেকে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল, ৪,০৯০০০ জন। উত্তরকালের এই সংখ্যা যে অতিরঞ্জিত, সে-বিষয়ে একমত। হলওয়েলের স্বভাবই ছিল গাঁজাখুরি, মানে আমাদের মতোই গালগপ্পো তৈরি করা। ইনিই সেই কুখ্যাত হলওয়েল, যিনি সিরাজ কর্তৃক অন্ধকূপে কয়েকশো ইংরেজ নরনারীকে হত্যার গাঁজাগপ্পো চালু করে সিরাজের বিরুদ্ধে সকলের মন বিষিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার বিনিময়ে অবশ্য পরে নানা সম্মান ও পদ কম জোটে নি কপালে। তাঁর চালু করা গাঁজাখুরি অন্ধকূপ হত্যার গপ্পো বিলেতের লোক খুব বিশ্বাস করত, যদিও পরে সেদেশের এবং এদেশের অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র মতো ঐতিহাসিক এই গাঁজাখুরি প্রমাণ করে দেন। হলওয়েলের স্মৃতিতে নির্মিত মনুমেন্ট তার পর থেকেই তার গুরুত্ব হারিয়ে আজ ময়দানের এক কোণে ভবঘুরেদের রাতে শোওয়ার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই অবশ্য স্মৃতিস্তম্ভের দিকে কেউ খুব একটা তাকাতো না আর।
১৭০২ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী কলকাতায় তখন ছিল ২টি প্রধান রাস্তা বা রাজপথ, ২টি গলি, ১৭টি ছোট বড় পুকুর, মাত্র আটটি পাকা বাড়ি এবং আট হাজার মাটির ঘর। বাকি জায়গায় ছিল বাগান, আবাদি জমি এবং অনেকটা অঞ্চল জুড়ে ঘন জঙ্গল। তবে ১৭০৭-এর আদমশুমারির হিসেবে যদি জল কম মেশানো থাকে, তাহলে ১৭০২-এর মেটে বাড়ির হিসেব ঠিক বলে মনে হয় না। যদি ধরে নেওয়া যায়, পাকা বাড়িতে মোট বাসিন্দার সংখ্যা সর্বোচ্চ চারশো পর্যন্ত ছিল, তাহলে বাদ বাকি সাড়ে এগারো হাজার লোকের জন্য আট হাজার মাটির বাড়ি যথেষ্ট গোলমেলে হিসেব!
১৭৮৪ থেকে ১৭৮৫-র মধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের অনুমতিক্রমে আঁকা উইলিয়ম বেইলির ম্যাপটিতে দেখা যায়, সেই সময় কলকাতার উত্তরে বাগবাজার, বেইলি অবশ্য লিখেছেন Bang bazar, সাহেবের নাদান ভুল আর কী ; দক্ষিণে চৌরঙ্গী ; পূর্বে মারাঠা ডিচ, তারও ওপারে লবণ হ্রদ এবং পশ্চিমে হুগলী নদী। ব্য্স, এই হল সেদিনের তিনটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা ইংরেজদের পরিকল্পিত ভাবী নগরের সীমানা। এর মধ্যে হুগলী নদীর গা ঘেঁষে গড়ে তোলা কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল প্রাথমিকভাবে ছিল সাহেব-পাড়া। ওই অঞ্চলে ছিল গভর্ণর হাউস, কাউন্সিল হাউস, অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিস, মিশন চার্চ, পুরাতন গির্জা ইত্যাদি। এমনকি আর্মেনিয়ান চার্চও ছিল ওই সীমানার মধ্যেই। এই অঞ্চলে সাধারণ দেশীয় মানুষদের, সে যত বড় কোটিপতিই হোক না কেন, বসবাসের অনুমতি ছিল না।
অবশ্য চার্ণকের সময় যদিও বা কিছুটা শিথিলতা ছিল, কলকাতায় আসার তিন বছর পরে তাঁর মৃত্যু হলে স্যার জন গোল্ডসবরা যখন কোম্পানির তরফে কলকাতায় পা রাখলেন, সেই ১৬৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সূতানুটিতে পা রেখেই তিনি পুরানো কুঠির চারদিকে মাটির প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং একই সঙ্গে সেরেস্তার কাগজপত্র রাখবার জন্য একটি পাকা কোঠা শেঠদের কাছ থেকে কিনে নেন। যদিও তখন পর্যন্ত তাঁরা নিজেরা মাটির কুঠিতেই বাস করতেন, যাকে বলে মাঠকোঠা। তবে প্রাচীর দেওয়ার কারণ, দেশীয় বা বিদেশীয়— যে-কেউ যখন-তখন কুঠির মধ্যে যাতে না-ঢুকে পড়তে পারে, সেজন্য। কোম্পানির অধীনস্থ কর্মচারীদের সুরক্ষার ব্যাপারটা তিনি অস্বীকার করতে পারেন নি। ১৮০১-এ ফোর্ট উইলিয়মের ভিত তৈরি হলে এবং আস্তে আস্তে দুর্গ নির্মাণ সমাপ্ত হলে ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সূতানুটির এই পুরানো মাঠকোঠাটি ভেঙে ফেলা হয় এবং দুর্গের লাগোয়া অঞ্চলে কেবলমাত্র ইংরেজদের বসবাসের বিধি চালু হয়। লোকে এই অঞ্চলকে বলত সাহেব পাড়া বা ধলোদের পাড়া। এর বাইরে অনেকটা দূরেই ছিল দেশীয় কালো মানুষদের পাড়া বা নেটিভদের বসবাসের স্থান। প্রথমদিকে ইংরেজমাত্রই কম দামে কোম্পানির কাছ থেকে জমি কিনে বসবাস এবং বাণিজ্যের সুবিধা ভোগ করত, এইভাবে আস্তে আস্তে দুর্গের সন্নিহিত অনেকখানি অঞ্চলেই তাদের বসবাস গড়ে ওঠে। পরে অবশ্য রবার্ট ক্লাইভ এসে এই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন, কারণ, এতে কোম্পানির অনেকখানি রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছিল।
শাসনকাজের সুবিধার জন্য এবং সেই সঙ্গেই রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য কোম্পানি প্রথম থেকেই কলকাতার সমগ্র অঞ্চলকে চার ভাগে ভাগ করে। এই ভাগগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট কিন্তু গুরুত্বে সবচেয়ে ভারি ছিল বড়বাজার অঞ্চল। মোট ৪৮৮ বিঘা জমির উপর জনঘনত্বের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এই অঞ্চল ইংরেজদের প্রথম দিকের দলিলপত্রে গ্রেট বাজার হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। কলকাতার পরবর্তীকালের বিখ্যাত বেনিয়া এবং বড়লোক বাবুদের অনেকেরই পিতৃপিতামহ এই অঞ্চলেই বাস করতেন। বড় বাজার তথা ‘বাজার কলকাতা’র মোট আয়তনের ৪০১ বিঘাতে ছিল ঘরবাড়ি, বাকি ৮৭ বিঘা ১০ কাঠার মধ্যে ৭ বিঘা ৪ কাঠায় ছিল কলাবাগান, ১৯ বিঘা ৩ কাঠায় ছিল সাধারণ বাগান এবং ২৬ বিঘা ৮ কাঠা ছিল ব্রহ্মোত্তর জমি। বড়বাজারের দক্ষিণে ছিল ‘ডিহি কলকাতা’ তথা শহর কলকাতা। এর মোট আয়তন ছিল ১৭১৭ বিঘা ১০ কাঠা। এর মধ্যে মাত্র ২৪৮ বিঘায় ঘরবাড়ি ছিল, বাকি ১৪৬৯ বিঘা ১০ কাঠা জমির কিছু অংশে চাষবাস হত, বাকি অংশ অনাবাদী অবস্থায় পড়ে ছিল। অনাবাদী জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬৪ বিঘা। এই জমিতে অবশ্য খুব শীঘ্রই জনবসতি গড়ে ওঠে, ফলে দীর্ঘদিন অনাবাদী হিসেবে পড়ে থাকে নি। চাষবাসযোগ্য জমির বেশিরভাগ অংশেই ধান চাষ করা হত, তার পরেই পাল্লা ভারি ছিল সবজিবাগানের, ৩৮ বিঘারও বেশি জমিতে চাষ করা হত তামাকের (আজকের বিমল, রজনীগন্ধা, কথা কেশরী ইত্যাদির বীজ সেই সময় থেকেই পত্তন হয় বেশ বোঝা যায়), বরং খাস কলকাতায় তুলাচাষের অঞ্চল হ্রাস পায়, মাত্র ১৯ বিঘা ১৫ কাঠা জমিতে তুলা চাষ হত বলে জানা যায়, বাকি অংশে ছিল কলাবাঘান, বাঁশবাগান, ৩৬৩ বিঘা ১৫ কাঠাতে ছিল ঘন জঙ্গল। পরে এই বন কেটে বসত গড়ে ওয়ঠে এবং একসময় বনের আর চিহ্নমাত্র থাকে না। মানুষের হাতে নগরায়নের নামে কীভাবে নির্বিচারে অরণ্যসম্পদ ধ্বংস করে ইকোসিস্টেমকে নষ্ট করা হয়েছে, সারা পৃথিবীতে তার দুটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ—নিউ ইয়র্ক এবং কলকাতা।
পুন্টিবুড়ি কি মিথ নাকি বাস্তবিক ? সেই অন্বেষণে - কনক মণ্ডল
কনক মন্ডল
ঠাকুমার ঝুলির গল্পের মতোই এ এক ভিন্ন কাহিনি। যেখানে প্রধান চরিত্র পুন্টিবুড়ি। ছেলেবেলায় এই মেলায় গিয়ে বহুবার পুন্টিবুড়িকে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও বুড়িকে পাইনি। বড় হবার সাথে সাথে জানতে পারি পুন্টিবুড়ির মেলা আসলে একটা মিথ। এক লোকজ অস্তিত্ব এখনও লুকিয়ে আছে এখানে। বনগাঁর পরের স্টেশন বিভূতিভূষণ হল্ট। স্টেশন লাগোয়া এই পুন্টিবুড়ির বাড়ি। ১৯৬৫-৭০ সাল নাগাদ এই বুড়ি মারা যায়। আনুমানিক বয়স তখন নব্বই ছুঁই ছুঁই। তার বিশ্বাস, আচার, আচরণকে ঘিরেই এই মেলার উৎপত্তি— যা পরম্পরায় আবহমান কাল ধরে বয়ে আসছে। আগে গুটি কয়েক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। বাংলাদেশে প্রায় বছর দশেক এই মেলার বিস্তৃতি ছিল। তারপর দেশের দোলাচল পরিস্থিতিতে বেনাপোল বর্ডার পার করে নিজের স্বপ্নে পাওয়া যক্ষের ধন মনসা ও শীতলা মূর্তি নিয়ে এদেশে চলে আসেন এক কাপড়ে। বনগাঁর মনমোহনপুর অঞ্চলে ওদেশ থেকে এসে বাস করছিলেন মনমোহন বিশ্বাস। পুন্টিবুড়ি সম্পর্কে তার ঝি-মা। রক্তের সম্পর্ক লতায় পাতায়। আত্মার সম্পর্কই প্রকট।
পূর্বের নিয়মমতো পুন্টিবুড়ি বসন্তকালে অমাবস্যার নতুন চাঁদের শুক্রবারে পুজোপাঠ স্থাপন করেন। তিনি হাম, পক্স রোগের ওষুধ দিতেন। বিনিময়ে নিতেন না কিছুই। দুর্মূল্যের বাজারে কারোর দেওয়া চাল-ডাল ছিল সম্বল। মন্ত্রের পাশাপাশি ওষুধের উপকরণ ছিল থানের মাটি, ঘটের জল ও গোটা নীল। শোনা যায়, সেসময় গ্রামে গ্রামে জলবসন্ত, গুটিবসন্তের একমাত্র নিরাময়ের পথ ছিলেন পুন্টিবুড়ি।
পুজোর উদ্ভব ও বিকাশ
মনসা ও শীতলা মায়ের পূজা এক বেদিতে দুই দিন পরপর দিতেন। দুই লৌকিক দেবীর পর পর পূজার রীতি এখনো এখানেই আছে। এই পূজা এখনও বাংলাদেশে একই দিনে হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার তরঙ্গহাটি, জ্বলেশ্বরে এই পূজার শাখা বিস্তৃত আছে। এক নিয়মে এক দিনে পূজা হয়। পাড়ার লোকের কাছে ছিল এক উৎসব। নিজেরাই চাল, ডাল জোগাড় করে তৈরি করতেন খিচুড়ি। পুন্টিবুড়ির নাম বললে কোনও মানুষ কখনও ফেরায়নি।
পুন্টিবুড়ির মৃত্যু বেশ অবাক ও রহস্য জনক। তিনি মারা যাবার বেশ কিছুদিন আগে এই ওষুধ মন্ত্র উত্তরসূরিকে দিয়ে গিয়েছিলেন। যাতে এই ওষুধ হারিয়ে না যায়। এরপর একদিন পাশের এক গ্রাম থেকে ওষুধ দিয়ে ফিরছিলেন। হাতে ছিল হাঁস মুরগির জন্য গেরি-গুগলি। পুন্টিবুড়ি কানে কম শুনতেন। রেল লাইনের উপর থেকে আসবার সময় চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়, ট্রেনের হর্নও শুনতে পারে না। ট্রেনের ধাক্কায় তিনি প্রাণ হারান। পুন্টিবুড়ির মৃত্যুর খবর চারিদিকে রটে গেলে পুন্টিবুড়িকে দেখতে সকলে আসতে থাকে। রেলের তখন বাড়িতে মৃতদেহ দেবার নিয়ম ছিল না। তৎসত্ত্বেও এই ঐশ্বরিক দেহ রেল আটকে রাখতে চায়নি। যদিও দেহ বলে নাকি কিছুই ছিল না কেবল কয়টি মাংসপিণ্ড। বাড়ির লোকজন রেলের উপর সে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। তারপর দিন সকালে বাড়ির সবথেকে ছোট সদস্য শীতল বিশ্বাস (বর্তমান বয়স ৬২-৬৫) স্বপ্নে দেখে পুন্টিবুড়ি বলছে, আমাকে তোরা বাড়িতে রাখলি না রে? আমার মাথার টুকরো এখনও পরে আছে ওই ব্রিজের পাশে। তুলে নিয়ে বাড়িতেই রাখিস। সকালে সে সকলকে জানিয়ে সেখানে যায় আর স্বপ্নের সব কথা হুবহু মিলে যায়। তারপর ফণীমনসাতলায় পুন্টিবুড়ির বেদি নির্মাণ হয়। এই ছোট সদস্যের নাম পুন্টিবুড়ি নিজে রেখেছিলেন। শীতলাপুজোর দিন হয়েছিল তাই নাম শীতল। সেই বছর থেকে একবছরও পুজো বন্ধ হয়নি। আজও পুন্টিবুড়ির থামের ওষুধে বসন্ত রোগ সেরে ওঠে।
পূজাপ্রণালী
আমাদের দেশে দু-রকমের ব্রতের চলন দেখা যায়। কতকগুলি শাস্ত্রীয় ব্রত, আর কতকগুলি শাস্ত্রে যাকে বলেছে মেয়েলি ব্রত। মেয়েলি ব্রতেরও দুটো ভাগ; একপ্রস্থ ব্রত বা কুমারী ব্রত। পাঁচ-ছয় থেকে আট-নয় বছরের মেয়েরা এগুলি করে। আর বাকিগুলি নারী ব্রত, বড় মেয়েরা বিয়ের পর থেকে এগুলি করতে আরম্ভ করে। এই শাস্ত্রীয় বা পৌরাণিক ব্রত যেগুলি হিন্দুধর্মের সঙ্গে এদেশে প্রচার লাভ করেছে। এবং দুই ভাগে বিভক্ত মেয়েলি ব্রত! এই পূজা প্রথমে মেয়েলি পূজা হিসেবেই পূজিত হলেও বর্তমানে তা ব্রাহ্মণ পরিচালিত। নিয়মের আছে বেশ ফারাক। পুন্টি বুড়ির থামে বছরে দুইবার মনসা পূজা ও একবার শীতলা পূজা হয়।
শ্রাবণ মাসের মনসা পূজা ও ব্রত কথা
শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে শনি ও মঙ্গলবারে মনসা পুজো করার নিয়ম। একটি মনসা গাছ, নৈবেদ্য ৮টি, কলা আর দুধ। মনসা পুজোয় ধূপ দেওয়া নিষেধ।
ব্রতের ফলশ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে মনসা পুজো করলে বাড়িতে কখনও সাপে কামড়ানোর ভয় থাকে না।
বসন্তকালে মনসা ও শীতলা মায়ের পূজার নিয়ম
জুলিয়া হোলান্ডারের মনিপুরি রোমান নাট্যের আনাচে কানাঁচে ঘুরে দেখালেন - সায়ন ভট্টাচার্য
সায়ন ভট্টাচার্য
জুলিয়া হোলান্ডার লন্ডনের ইংলিশ ন্যাশনাল অপেরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ও প্রযোজক। তার গবেষণার বিষয় সারা পৃথিবী ব্যাপী যে সাংস্কৃতিক আঙ্গিক, তার ফর্ম আছে কিংবা আঞ্চলিক নাষ্ঠের ঐতিহাসিক যে সমস্তে শরম ফর্ম রয়েছে তার ব্যবহার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের থিয়েটারের প্রায়গিক ক্ষেত্রে। তিনি বিশ্বাস করেন থিয়েটার এর আঞ্চলিক ভাষা কখনোই সীমবব্ধ নয়, পৃথিবীর মানুষের চিন্তা ও বক্তব্যের সঙ্গে ফর্ম/ছাঁচ ঠিক একটা মিল তৈরি করে নেবেই তিনি শুধু মাত্র প্রমোনিয়াম হলেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন নি, মুক্তমঞ্চে, চার্চের মধ্যে কিংবা কোনও বাড়ির দালানে- স্কুলের মঞ্চে বা জিমন্যাসিয়ামে তিনি তাঁর নাট্যকে উপস্থাপন করে থাকেন।
১৯৯৪ সালে শ্রীমতী হোলান্ডার ভারত সফরে আসেন বিভিন্ন ধরনের প্রায়োগিক শিল্প যেমন রামলীলা, সংকীর্তন কিংবা মার্সল আর্টস দেখতে আসেন। পাশ্চাত্যের অপেরা মুঙ্গীতের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার আর্ট ফর্ম কীভাবে একাত্ম হতে পারে তাই নিয়ে তিনি গবেষণা করেছিলেন তখন। ১৯৯১ সালে মুম্বাইতে প্রথম এসে ওনার সঙ্গে পরিচয় হয়- হিন্দি ও মারাঠি নাট্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক বীনাপানি চাওলা। বীনাপানির মাধ্যমেই ওনার সুযোগ হয় মনিপুরের মৃত্যু সঙ্গীত শোনার এর গভীর প্রভাব পরবর্তীকালে তৈরি হয় জুলিয়া হোলান্ডর-এর মধ্যে। এরপর জুলিয়া দুবছর ধরে সঙ্গীতের এই ধারা নিয়ে গবেষণা করেন। মনিপুরের সঙ্গীত, নাট্য ও জনসংস্কৃতি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। উনি যোগাযোগ করলেন লোকেন্দ্র আরামবাম-এর ‘ফোরাম ফর ল্যাবোরেটরি থিয়েটার’, ইমফল-এ। লোকেন্দ্র আরমবাম এর আমন্ত্রণে উনি অতিথি শিল্পী ও শিক্ষক হয়ে ল্যাবোরেটরিতে গেলেন। এশিয়া থিয়েটারের নিজস্ব অবস্থান ও জোরের জায়গাটা কোথায়, আস্তে আস্তে সেই ভাষার আবিষ্কারের চেষ্টা বেশ মনোযোগ দিয়ে করছে প্রতিটা দেশ। আর ভারতবর্ষের মতো দেশে থিয়েটারের ঐতিহাসিকতা বিশ্বের সব থেকে প্রাচীন, কিন্তু ঔপনিবেশিক রাজনীতি বারবার সেই সত্যকে চেপে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু জুলিয়া হোলান্ডার ১৯৯৪ সালের একটি ভারতবর্ষ ভ্রমণের রিপোর্টে লিখেছিলেন, ‘I was well aware of the legacy of British theatre directors from Edward Gordon Craig to Peter Brook whereby my countrymen have visited Indian theatre companies and simply raided them for images and ideas which they can exploit back home. This new face of colonializm importing the exotic paraphernalia of Indian theatre to say. country was something of which I wanted no part.’ (‘Seagull Theatre quarterly / Issue 13) Jan-1994
জুলিয়া বিশ্বাস করেন প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের একটা সংযোগ সেতু থাকা প্রয়োজনীয়, শুধু মাত্র গ্রহণ করে নেওয়া নয়, প্রাচ্যের থিয়েটারের মূল আঙ্গিককে বজায় রেখে পাশ্চাত্যের স্টাইলকে প্রয়োগ করাটা জরুরি। এশিয়া থিয়েটার নিজেকে নতুন ভাবে পুষ্ট করে তুলছে বিশ্বায়নের পৃথিবীতে, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কীভাবে একটা ফর্ম আর একটা ফর্মের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে, দুই কমন একটি নাট্য (পৃথিবীর যে ভ্রান্তেরই হোক। দুই কখন একটি নাট্য (পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেনো) আমাদের এশিয়ার সংস্কৃতির মধ্যে মিলে মিশে একাকার হয়ে হয়ে যেতে পারে। জুলিয়া হোলান্ডারের ভারত ভ্রমন কোথাও এই উত্তরগুলোর পথ তৈরি করে দিতে সাহায্য করে। জুলিয়া হোলান্ডারের ল্যাবোরেটরিতে কোন নাটক করার জন্য অনুরোধ করা হয়? সেনেকা-র ‘ট্রাজান ওমেন’, ‘ট্রয়ের নারী’। জুলিয়ার অত্যন্ত প্রিয় একটি টেক্সট, তিনিও বিষয়টি এককথায় লুফে নেন। তিনি দেখান কীভাবে একটি গ্রীক নাট্য, রোমক লোকনাট্য আঙ্গিকে প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল, উনি ব্যাখ্যা করে দেখান ট্রয়ের নারী’র মূল কাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রেম ও যুদ্ধের যে ক্ষত, একক মানবের যন্ত্রণাত্বক অবস্থান থেকে সামাজিক অবস্থানে তাঁর কর্মকান্ডের বৈপরিত্য সংকট ও সংশয়ের চালচিত্র, মনিপুরি ছাত্র ছাত্রীরা বুঝতে পারে কিভাকে গ্রীক রাস্ট্র ব্যবস্থা রোমান রাষ্ট্র শাসনতন্ত্র ও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় মনিপুরকে মর্জিনে ঠেলে দেওয়ার যে চক্রান্ত তাই বারবার যেন এই নাট্যে ফিরে আসছিল। ভুলে গেলে চলবে না জুলিয়া কিন্তু একজন অপেরা নির্দেশক, তিনি গ্রীক ও ভারতীয় সুরের মধ্যে যন্ত্রণা ও শোষণের তুল্যমূল্য বিচার বুঝতে পেরেছিলেন। সুরকার ভাগনার শেষ শতাব্দিতে বলেছিলেন নাট্য উৎসব (গ্রীক) সমারোহের মধ্যে দিয়ে সঙ্গীত অপেরার প্রথম ভিত্তিভূমি তৈরি হয়, মনিপুরের সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে ধ্রুপদী কাহিনির (ওরেস্টিয়ার কাহিনি অউদিপাউসের কাহিনি) রূপক o সংকেতের ব্যবহার অনায়াসে অনুপ্রবেশ ঘটে গেল। কাহিনি রূপক ও সাংকেই জুলিয়া পাঠ করেছিলেন কিভাবে ইমফলের মধ্যে, গৃহযুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি করেছে রাষ্ট্র। তিনি যেহেতু অতিথি এই দেশের তাই সরাসরি রাজনৈতিক অবস্থান তাঁর পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি তিরিশ মিনিটের মধ্যে ট্রয়ের নারী প্রথম দুটি দৃশ্য তৈরি করেন নাট্য, নৃত্য সংগীতের মেলবন্ধনে।
জুলিয়া বিশ্বাস করেছেন সম্পূর্ণ বিপরীত সংস্কৃতির সঙ্কটজনক একটি প্রান্তিক অংশের মধ্যে থেকে থিয়েটারের ভাষা আসলে বিশ্ববোধসম্পন্ন মানবভাষারই পরিপূরক হয়।
সম্পর্কের রাসায়নিক সমীকরণে রাইমা-ঋত্বিকের ‘কলঙ্ক’ কতটা সফল খুঁজে দেখলেন- বৃতা মৈত্র
মাফ করবেন পাঠক এমন একটি শিরোনামের জন্য। বিনোদন ব্যবসায় ‘কলঙ্ক‘ বেশ একটি জুতসই শব্দ, যা নাকি উপভোক্তা টানতে অব্যর্থ। অবশ্যই রাইমা এখানে চৈতি আর রঙ্গন হয়েছেন ঋত্বিক। হইচই চ্যানেলের ‘কলঙ্ক‘ ওয়েব সিরিজের গল্পটি হলো রঙ্গন আর চৈতির। বিয়ের সময় এই দম্পতি অঙ্গীকার করে তারা একে অপরের কাছে সৎ ও স্বচ্ছ থাকবে। কেউ কারও কাছে কিছু লুকোবে না। এমনকী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথাও। ব্যাপারটা কেমন একটা সোনার পাথরবাটির মতো শোনাচ্ছে, তাই না?
এহেন অঙ্গীকার যে সোনার পাথরবাটিরই সামিল, সেটা দর্শক শুরুতেই দেখেন রঙ্গন-চৈতির বিয়ের কুড়ি বছর পূর্তির সেলিব্রেশনে। ধিকি ধিকি জ্বলা আগুন বাইরে চলে আসে তাদের অ্যানিভার্সারি সেলিব্রেশনের কেক কাটার মুহূর্তে। উপস্থিত সকলেই দেখতে পায়, কেকের ওপর লেখা রয়েছে ‘হ্যাপি অ্যানিভার্সারি টু লায়ার’। পর্যায়ক্রমে জানা যায়, রঙ্গন দ্বিচারিতা করলেও সেটা গোপন রাখেনি চৈতির কাছে। সে চৈতির জ্ঞাতসারেই জড়িয়ে পড়েছে কঙ্কনা নামের এক তরুণীর সঙ্গে। অন্যদিকে চৈতিও ধোয়া তুলসিপাতা নয়। তারও একটি অ্যাফেয়ার হয়েছিল। তাদের কিশোরী কন্যার বিদ্রোহ জানিয়ে দেয়, স্বামীর মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিয়ে চৈতিও ভন্ডামির আশ্রয় নিয়েছে। সমাজের কাছে তাদের এই নিটোল দাম্পত্যই আসলে এক চরম মিথ্যা। কোনও একদিন এটা তো প্রকাশ্যে আসতোই।
সাহানা দত্ত বাংলা টিভি ও সিরিয়াল দুনিয়ায় তারকা-নাম অর্জন করেছেন। একডাকে তাঁকে চেনে সবাই। ‘কলঙ্ক’ সৃষ্টির বুনোটে সফল তিনি। কাহিনির পাশাপাশি চিত্রনাট্য ও সংলাপও তিনিই লিখেছেন। বেশ ধারালো এবং ঝাঁঝালো সংলাপ, সে বিষয় যতই শূন্য কলসি হোক! ঝাঁ চকচকে সেট, ডিজাইনার পোশাক ও গহনায় রূপসী রাইমার উপস্থিতি–এইসবের মধ্যে ঋত্বিকের বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ের চেষ্টাটাই কেমন যেন বেখাপ্পা লাগে। তবে, এই জাতীয় আরোপিত সমস্যার নাটকে অভিনেতাদের কী-ই বা করার থাকে! ঋত্বিক অফবিট থেকে মেনস্ট্রিম সিনেমার রঙিন দুনিয়ায় পা রেখেছেন বহুকাল আগেই। সেটা ভালো। পেশায় টিকে থাকতে নাক নিচুই রাখতে হয়। তবে, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে দাম্পত্যের এই অবুঝ কোন্দলে রাইমা ফিট করে যান সহজেই, কিন্তু ঋত্বিক নন।
‘কলঙ্ক’-এর শেষে যে ক্লাইম্যাক্স রচিত হয়, তা একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড! বিশদে যাব না। তাতে পাঠক থুড়ি দর্শক সিরিজ দেখার মজা থেকে বঞ্চিত হবেন। এইটুকু বলার, কলঙ্ক থেকেই যাবতীয় অসুস্থ দাম্পত্য এবং সেখান থেকেই খুনোখুনির আয়োজন, এমন একটা ধারণা এই সিরিজ আপনাকে দিতে পারে। পরবর্তী সিজনের সম্ভাবনা জনিত একটা ভাবনাও উঁকি দেয়। বিষয়ভাবনা নিয়ে খুব বেশি বিশ্লেষণী না হলে, এমনিতে অভিমন্যু মুখার্জি পরিচালিত ‘কলঙ্ক’ দেখতে মন্দ লাগবে না । সেটের কথা আগেই বলেছি। ক্যামেরার কাজ বেশ ভালো। আলোর সুচারু ব্যবহারে রহস্য ঘন পরিবেশ সৃষ্টির দ্বারা জবরদস্ত নাটক তৈরি হয়েছে। আবহ চমৎকার।
অভিনয়ে ঋত্বিক-রাইমা ছাড়াও আছেন সৃজলা গুহ, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, অদিতি চ্যাটার্জি, অজপা মুখার্জি, যুধাজিৎ সরকার, তিয়াস চক্রবর্তী, সোহিনী বোস, বিয়াস ধর, রেহান দত্ত প্রমুখ ও গৌরব চক্রবর্তী। রঙ্গন-চৈতির কিশোরী কন্যার ভূমিকায় বিয়াস ধরকে বেশ ভালো লাগে। বাবা-মায়ের অসুস্থ সম্পর্ক তার মনোজগতে যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, সেটা বেশ সাবলীল ভাবেই প্রকাশ করে বিয়াস। গৌরব চক্রবর্তী স্বল্প পরিসরে চমৎকার। সৃজলা গুহ স্মার্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ে নজর কাড়েন। বরাবরের মতোই নিখুঁত অম্বরীশ। সিনেমাটোগ্রাফার অনুজিৎ কুণ্ডু। সম্পাদনা রবিরঞ্জন মৈত্র। হইচই অরিজিনালস নিবেদিত মিসিং স্ক্রু ক্রিয়েশনস প্রযোজিত ৮ পর্বের ‘কলঙ্ক’ পরকীয়ার মোড়কে নির্মিত রহস্য নাটক হিসেবে দেখতেই পারেন আপনি। আর কিছু না হোক, পুরোনো বোতলে নতুন মদ পান করার স্বাদ নিশ্চয়ই পাবেন, গ্যারান্টি।